সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের পরেও মা হওয়া যায়!
ক্যান্সার নানা ধরনের হতে পারে। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করার পর সন্তানধারণ করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপির মতো চিকিৎসা প্রক্রিয়া ইউটেরাস এবং ওভারিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সন্তানধারণ
সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার কোন পর্যায়ে রয়েছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসার পদ্ধতি। সার্ভিক্সে অস্বাভাবিক ধরনের কোষের বৃদ্ধি হলে ‘কোন বায়োপ্সি’ করা হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় সারভিক্স থেকে ‘কোন’ বা ‘শঙ্কু’ আকৃতির একটি অংশ বের করা হয়। ওই অংশে ক্যান্সারযুক্ত অংশটিও থাকে। সারভিক্সে যাতে কোনও ক্যান্সারযুক্ত কোষ অবশিষ্ট না থাকে তা নিশ্চিত করে এই চিকিৎসা পদ্ধতি। সাধারণত ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে এই চিকিৎসাপদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। ফলে ভবিষ্যতে সন্তানধারণ করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয় না। অবশ্য চিকিৎসা প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার ৬ থেকে ১২ মাস পরেই সন্তানধারণের পরিকল্পনা করা উচিত। তবে প্রেগন্যান্সি আসার পরেও মিসক্যারেজ, ইনফার্টিলিটি, বাচ্চার জন্মের পর ওজন কম থাকা এবং সঠিক সময়ের আগে বাচ্চার জন্মের (প্রিম্যাচিওর বার্থ) আশঙ্কাও থাকে। আসলে সারভিক্সের কতখানি অংশ বের করা হচ্ছে তার উপরেও সন্তানধারণের বিষয়টি অনেকখানি নির্ভর করে।
প্রাথমিক পর্যায়ের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের চিকিৎসাও র্যাডিক্যাল ট্র্যাকিলেকটমির মাধ্যমে করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় সারভিক্সের সিংহভাগ অংশ বাদ দেওয়া হয়। তবে ইউটেরাসের নীচের অংশ রয়ে যায়। এই সার্জারির পরেও মহিলারা সন্তানধারণ করতে পারেন। তবে মিসক্যারেজ এবং প্রিম্যাচিওর বার্থ-এর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনকী নর্মাল ডেলিভারি করাও সম্ভব হয় না কারণ সারভিক্স সেলাই করা থাকে।
সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার অসুখটি কয়েকধাপ এগিয়ে গেলে তখন হিস্টেরেকটমি করা হয়। এই পদ্ধতিতে ইউটেরাস এবং সারভিক্স অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া অপারেশনের পরে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দেওয়ারও দরকার পড়তে পারে। সমগ্র চিকিৎসা পদ্ধতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ইউটেরাস এবং ওভারির উপর। এমনকী আগাম মেনোপজ চলে আসাও আশ্চর্য নয়। ওভামেরও প্রবল ক্ষতি হয়।
চিকিৎসার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তানধারণ হয়তো সম্ভব নয়, তবে অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি’র দ্বারা মা হওয়া অসম্ভব নয়। তাই হিস্টেরেকটমি, রেডিওথেরাপি কিংবা কেমোথেরাপির আগে ওভাম অথবা ভ্রূণ সংরক্ষণ করা উচিত। এর ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইউটেরাস বাদ না গেলে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতির সাহায্যে গর্ভধারণ করা যায়। অন্যদিকে ইউটেরাস বাদ পড়লে সারোগেসির মাধ্যমেও মা হওয়া সম্ভব। ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কিন্তু স্বাভাবিক পথে অথবা
আইভিএফ, আইইউআই ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে গর্ভধারণ করা যায়। অবশ্য রেডিওথেরাপি কিংবা কেমোথেরাপি নিতে হলে ৬ মাস অপেক্ষা করার পরেই সন্তানধারণ করা উচিত।
অসুখ হিসেবে ক্যান্সার যথেষ্ট গুরুতর। ফলে ক্যান্সার হলে রোগীর মনে বিপুল উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। আর একজন মহিলা যখন শোনেন ক্যান্সারের কারণে সন্তানধারণের সম্ভাবনা হ্রাস পেতে পারে তখন তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান। তাই সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে, চিকিৎসা শুরু করার
আগে অবশ্যই একজন ‘ফার্টিলিটি এক্সপার্টে’র পরামর্শ নিন। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ক্যান্সারের পর্যায়, চিকিৎসার পর শরীরে কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সেই বিষয় নিয়ে কথা বলুন। কী কী উপায়ে মা হতে পারেন সেই বিষয়েও জানুন। দ্বিধা কাটাতে আপনার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছেন এমন মহিলার সঙ্গে কথা বলুন।
ডাঃ সুপর্ণা ভট্টাচার্য্য
আইভিএফ স্পেশালিস্ট
নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটি, কলকাতা